চাতুর্মাস্য (শ্রাবণ মাস) স্তোত্র
শ্রীগুর্বষ্টকম্
[শ্রীল-বিশ্বনাথ-চক্রবর্ত্তি-ঠক্কুর বিরচিতম্]
সংসার-দাবানল-লীঢ়-লোক-
ত্রাণায় কারুণ্যঘনাঘনত্বম্ ।
প্রাপ্তস্য কল্যাণ-গুণার্ণবস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥১॥
সংসাররূপ দাবানল-সন্তপ্ত জীবসমূহের পরিত্রাণের জন্য যিনি কারুণ্য-মেঘ-রূপ প্রাপ্ত হইয়া কৃপাবারি বর্ষণ করেন, আমি সেই কল্যাণ-গুণনিধি শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম বন্দনা করি।
মহাপ্রভোঃ কীর্ত্তন-নৃত্য-গীত-
বাদিত্রমাদ্যন্মনসো রসেন ।
রোমাঞ্চ-কম্পাশ্রু-তরঙ্গ-ভাজো
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥২॥
শ্রীমন্মহাপ্রভুর প্রেমরসপূর্ণ সন্ধীর্ত্তন, নৃত্য, গীত ও বাদ্যাদি-দ্বারা উন্মত্তচিত্ত যাঁহার রোমাঞ্চ, কম্প, অশ্রুতরঙ্গ উদ্গত হয়, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।
শ্রীবিগ্রহারাধন-নিত্য-নানা-
শৃঙ্গার-তন্মন্দির-মার্জ্জনাদৌ ।
যুক্তস্য ভক্তাংশ্চ নিয়ুঞ্জতোঽপি
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৩॥
যিনি শ্রীবিগ্রহের নিত্যসেবা, আদ্য-রসোদ্দীপক নানাবিধ বেশ-রচনা ও শ্রীমন্দির-মার্জ্জন প্রভৃতি সেবায় স্বয়ং নিযুক্ত থাকেন এবং [অনুগত] ভক্তগণকে সে-সকল সেবায় নিযুক্ত করেন, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।
চতুর্ব্বিধ-শ্রীভগবৎপ্রসাদ-
স্বাদ্বন্ন-তৃপ্তান্ হরিভক্ত-সঙ্ঘান্ ।
কৃত্বৈব তৃপ্তিং ভজতঃ সদৈব
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৪॥
যিনি শ্রীকৃষ্ণ-ভক্তবৃন্দকে চর্ব্ব্য, চুষ্য, লেহ্য ও পেয়—এই চতুর্ব্বিধ রসসমন্বিত সুস্বাদু প্রসাদান্ন-দ্বারা পরিতৃপ্ত করিয়া (অর্থাৎ প্রসাদ সেবন-জনিত প্রপঞ্চ-নাশ ও প্রেমানন্দের উদয় করাইয়া) স্বয়ং তৃপ্তি লাভ করেন, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।
শ্রীরাধিকা-মাধবয়োরপার-
মাধুর্য্য-লীলা-গুণ-রূপ-নাম্নাম্ ।
প্রতিক্ষণাস্বাদন-লোলুপস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৫॥
যিনি শ্রীরাধামাধবের অনন্ত-মাধুর্য্যময় নাম, রূপ, গুণ ও লীলাসমূহ আস্বাদন করিবার জন্য সর্ব্বদা লু্ব্ধচিত্ত, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।
নিকুঞ্জযূনো-রতিকেলি-সিদ্ধ্যৈ
র্যা যালিভির্যুক্তিরপেক্ষণীয়া ।
তত্রাতিদাক্ষাদতিবল্লভস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৬॥
নিকুঞ্জবিহারী “ব্রজযুব-দ্বন্দ্বের” রতিক্রীড়া-সাধনের নিমিত্ত সখীগণ যে যে যুক্তি অবলম্বন করিয়া থাকেন, তদ্বিষয়ে অতিনিপুণতা-হেতু যিনি তাঁহাদের অতিশয় প্রিয়, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম আমি বন্দনা করি।
সাক্ষাদ্ধরিত্বেন সমস্ত-শাস্ত্রৈ-
রুক্তস্তথা ভাব্যত এব সদ্ভিঃ ।
কিন্তু প্রভোর্যঃ প্রিয় এব তস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৭॥
নিখিলশাস্ত্র যাঁহাকে সাক্ষাৎ শ্রীহরির অভিন্ন-বিগ্রহরূপে কীর্ত্তন করিয়াছেন এবং সাধুগণও যাঁহাকে সেইরূপেই চিন্তা করিয়া থাকেন, তথাপি যিনি—প্রভু শ্রীভগবানের একান্ত প্রেষ্ঠ, সেই শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্ম বন্দনা করি।
যস্য প্রসাদাদ্ ভগবৎ-প্রসাদো
যস্যাপ্রসাদান্ন গতিঃ কুতোঽপি ।
ধ্যায়ংস্তুবংস্তস্য যশস্ত্রিসন্ধ্যং
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ॥৮॥
একমাত্র যাঁহার কৃপাতেই ভগবদনুগ্রহ-লাভ হয়, যিনি অপ্রসন্ন হইলে জীবের কোথাও গতি নাই, আমি ত্রিসন্ধ্যা সেই শ্রীগুরুদেবের কীর্ত্তিসমূহ স্তব ও ধ্যান করিতে করিতে তাঁহার পাদপদ্ম বন্দনা করি।
শ্রীমদ্গুরোরষ্টকমেতদুচ্চৈ
র্ব্রাহ্মে মুহূর্ত্তে পঠতি প্রয়ত্নাৎ ।
যস্তেন বৃন্দাবন-নাথ-সাক্ষাৎ-
সেবৈব লভ্যা জনুষোঽন্ত এব ॥৯॥
যে ব্যক্তি এই শ্রীগুরুদেবাষ্টক ব্রাহ্মমুহূর্ত্তে (সূর্য্যোদয়ের দুই মুহূর্ত্ত পূর্ব্বকালে) অতিশয় যত্নের সহিত উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করেন, তিনি বস্তুসিদ্ধি-কালে বৃন্দাবনচন্দ্রের সেবাধিকার প্রাপ্ত হন।
শ্রীশ্রীপ্রভুপাদপদ্ম-স্তবকঃ
[শ্রীল-ভক্তিরক্ষক-শ্রীধর-গোস্বামী-মহারাজ-বিরচিতম্]
সুজনার্ব্বুদ-রাধিত-পাদযুগং
যুগধর্ম্ম-ধুরন্ধর-পাত্রবরম্
বরদাভয়-দায়ক-পূজ্যপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥১॥
কোটী কোটী সুজন-কর্ত্তৃক আরাধিত শ্রীপাদপদ্ম-যুগল, [কৃষ্ণকীর্ত্তনরূপ] যুগধর্ম্ম-সংস্থাপক, [বিশ্ববৈষ্ণব-রাজসভার] পাত্ররাজ, [নিখিল জীবের] মনোভীষ্ট-প্রদাতা ও অভয়-প্রদাতা সর্ব্বপূজ্য জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
ভজনোর্জ্জিত-সজ্জন-সঙ্ঘপতিং
পতিতাধিক-কারুণিকৈকগতিম্
গতিবঞ্চিত-বঞ্চকাচিন্ত্যপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥২॥
যিনি ভজন-সমৃদ্ধ সুজনগণের অধিপতি, পতিতজনের প্রতি অধিক করুণাময় ও যিনি বঞ্চিতগণের একমাত্র গতি এবং বঞ্চকগণের নিকট অচিন্ত্যনীয়, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
অতিকোমল-কাঞ্চন-দীর্ঘতনুং
তনুনিন্দিত-হেম-মৃণালমদম্
মদনার্ব্বুদ-বন্দিত-চন্দ্রপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৩॥
যিনি অতি কোমল সুবর্ণবর্ণ দীর্ঘতনু-বিশিষ্ট, যাঁহার তনু-কর্ত্তৃক স্বর্ণময় মৃণালের মত্ততা নিন্দিত হইতেছে, কোটী কোটী মদনকর্ত্তৃক বন্দিত নখচন্দ্রসমূহ যে শ্রীগুরুপাদপদ্মের শোভা বিস্তার করিতেছে, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
নিজসেবক-তারক-রঞ্জিবিধুং
বিধুতাহিত-হুঙ্কৃত-সিংহবরম্-
বরণাগত-বালিশ-শন্দপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৪॥
আকাশে তারকা-বেষ্টিত চন্দ্রের ন্যায় যিনি নিজ সেবকমণ্ডলে পরিবেষ্টিত হইয়া তাঁহাদের চিত্ত প্রফুল্লিত করিয়া থাকেন, ভক্তিদ্বেষিগণ যাঁহার হুঙ্কারে বিদ্রাবিত হয় এবং নিরীহ জনগণ যাঁহার পাদপদ্ম বরণ করিয়া পরম কল্যাণ লাভ করেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
বিপুলীকৃত-বৈভব-গৌরভুবং
ভুবনেষু বিকীর্ত্Tইত-গৌরদয়ম্
দয়নীয়গণার্পিত-গৌরপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৫॥
যিনি শ্রীগৌরধামের বিপুল বৈভব প্রকাশ করিয়াছেন, শ্রীগৌরাঙ্গের মহাবদান্যতার কথা যিনি নিখিল ভুবনে বিঘোষিত করিয়াছেন এবং নিজ কৃপাভাজন-জনগণের হৃদয়ে যিনি শ্রীগৌরপাদপদ্ম প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
চিরগৌর-জনাশ্রয়-বিশ্বগুরুং
গুরু-গৌরকিশোরক-দাস্যপরম্
পরমাদৃত-ভক্তিবিনোদপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৬॥
যিনি গৌরাশ্রিত জনগণের নিত্য আশ্রয়-স্থলস্বরূপ জগদ্গুরু, যিনি নিজ গুরু শ্রীগৌরকিশোর-প্রভুর প্রতি সেবাপরায়ণ এবং যিনি শ্রীভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সম্বন্ধমাত্রে পরমাদরবিশিষ্ট, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
রঘু-রূপ-সনাতন-কীর্ত্তিধরং
ধরণীতল-কীর্ত্তিত-জীবকবিম্
কবিরাজ-নরোত্তম-সখ্যপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৭॥
যিনি শ্রীরূপ-সনাতন ও রঘুনাথের কীর্ত্তিকেতন উত্তোলন করিয়া বিরাজমান, এই ধরণীতলে যাঁহাকে পাণ্ডিত্য-প্রতিভাময় শ্রীজীবের অভিন্নতনু বলিয়া অনেকে কীর্ত্তন করিয়া থাকেন এবং যিনি শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ ও ঠাকুর শ্রীনরোত্তমের সমপ্রাণ বলিয়া প্রসিদ্ধি-লাভ করিয়াছেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
কৃপয়া-হরিকীর্ত্তন- মূর্তি-ধরং
ধরণী-ভরহারক-গৌরজনম্
জনকাধিক-বৎসল- স্নিগ্ধপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৮॥
জীবের প্রতি কৃপা করিয়া যিনি মূর্ত্তিমান্ হরিকীর্ত্তন-স্বরূপে প্রকাশিত, ধরণীর অপরাধভার-বিদূরণকারী শ্রীগৌরপার্ষদ এবং জীবের প্রতি পিতা অপেক্ষাও অধিক বাৎসল্য-স্নিগ্ধ, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
শরণাগত-কিঙ্কর-কল্পতরুং
তরুধিক্কৃত-ধীর-বদান্যবরম্
বরদেন্দ্র-গণার্চ্চিত-দিব্যপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥৯॥
শরণাগত-কিঙ্করগণের নিকট যিনি কল্পবৃক্ষ-স্বরূপ, যাঁহার সহিষ্ণুতা ও বদান্যবরতার নিকট বৃক্ষও ধিক্কৃত হয় এবং বরদশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণও যাঁহার দিব্য শ্রীপাদপদ্মের পূজা করিয়া থাকেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
পরহংসবরং পরমার্থপতিং
পতিতোদ্ধরণে কৃত-বেশযতিম্
যতিরাজগণৈঃ পরিসেব্যপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥১০॥
পরমহংস-কুলতিলক যিনি পরমপুরুষার্থ শ্রীকৃষ্ণপ্রেম-সম্পত্তির অধিপতি, পতিতকুলের উদ্ধার নিমিত্ত যিনি যতিবেশ ধারণকারী এবং শ্রেষ্ঠ ত্রিদণ্ডী যতিগণ যাঁহার শ্রীপাদপদ্ম সেবা করিতেছেন, সেই জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
বৃষভানুসুতা-দয়িতানুচরং
চরণাশ্রিত-রেণুধরস্তমহম্
মহদদ্ভুত-পাবন-শক্তিপদং
প্রণমামি সদা প্রভুপাদপদম্ ॥১১॥
যিনি শ্রীবৃষভানু-নন্দিনীর পরম প্রিয় শ্রীকৃষ্ণের অনুচর, যাঁহার শ্রীচরণরেণু আমি মস্তকে ধারণ করিবার সৌভাগ্যের অভিমান করিতেছি, সেই অদ্ভুত পাবনীশক্তি-সম্পন্ন জগদ্গুরু শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের সেই পদনখ-জ্যোতিঃপুঞ্জকে আমি নিত্যকাল প্রণাম করি।
শ্রীষড়্গোস্বাম্যষ্টকম্
[শ্রীল-শ্রীনিবাসাচার্য্য-বিরচিতম্]
কৃষ্ণোৎকীর্ত্তন-গান-নর্ত্তন-পরৌ প্রেমামৃতাম্ভোনিধী
ধীরাধীরজন-প্রিয়ৌ প্রিয়করৌ নির্ম্মত্সরৌ পূজিতৌ
শ্রীচৈতন্য-কৃপাভরৌ ভুবি ভুবোভারাবহন্তারকৌ
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥১॥
যাঁহারা শ্রীকৃষ্ণের নাম-রূপ-গুণ-লীলাদির কীর্ত্তন, গান এবং নৃত্যপরায়ণ, প্রেমামৃতের সমুদ্রস্বরূপ, বিদ্বান্-অবিদ্বান্ জনগণের প্রিয়, প্রত্যেকের প্রিয়কার্য্য-কারী, নির্ম্মৎসর, সর্ব্বলোক -পূজিত ও শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর অতিশয় কৃপাপাত্র এবং ভূতলে ভক্তিরস বিস্তারপূর্বক পৃথিবীর ভারহরণ-কারী, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল (শ্রীরঘুনাথদাস-গোস্বামী, শ্রীরঘুনাথ-ভট্ট-গোস্বামী) ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।
নানাশাস্ত্র-বিচারণৈক-নিপুণৌ সদ্ধর্ম্ম-সংস্থাপকৌ
লোকানাং হিতকারিণৌ ত্রিভুবনে মান্যৌ শরণ্যাকরৌ
রাধাকৃষ্ণ-পদারবিন্দ-ভজনানন্দেন মত্তালিকৌ
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥২॥
যাঁহারা বহছবিধ শাস্ত্রের গঢ় তাৎপর্য্য বিচার করিতে সুনিপুণ, শুদ্ধভক্তিরূপ পরমধর্ম্মের সংস্থাপক, সর্ব্বজনের মঙ্গলসাধক পরমহিতৈধবী, ব্রিভুবনে বন্দ্যমান্, শরণাগতবৎসল এবং শ্রী্রীরাধাগোবিন্দের চরণারবিদ্দের ভজনরূপ আনন্দরসে মত্ত মধুকরস্বরূপ, আমি সেই শ্রীশ্রীরাপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।
শ্রীগৌরাঙ্গ-গুণানুবর্ণন-বিধৌ শ্রদ্ধা-সমৃদ্ধ্যন্বিতৌ
পাপোত্তাপ-নিকৃন্তনৌ তনুভৃতাং গোবিন্দ-গানামৃতৈঃ
আনন্দাম্বুধি-বর্দ্ধনৈক-নিপুণৌ কৈবল্য-নিস্তারকৌ
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৩॥
যাঁহারা ভগবান্ শ্রীগৌরসুন্দরের বিবিধ গুণানুবর্ণনে প্রগাঢ় শ্রদ্ধাযুক্ত, শ্রীকৃষ্ণের গুণগানরূপ অমৃতবৃষ্টিদ্বারা প্রাণীমাত্রের পাপ-তাপ দূরকারী, প্রতি পদে (জীবের) আনন্দসিন্ধু বর্দ্ধনপূর্ব্বক জগন্মঙ্গলবিধানে রত এবং ভক্তিরস-সিঞ্চনদ্বারা জীবগণকে কৈবল্য-নামক মুক্তি হইতে উদ্ধারপরায়ণ, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।
ত্যক্ত্বা তূর্ণমশেষ-মণ্ডলপতি-শ্রেণীং সদা তুচ্ছবৎ
ভূত্বা দীনগণেশকৌ করুণয়া কৌপীন-কন্থাশ্রিতৌ
গোপীভাব-রসামৃতাব্ধি-লহরী-কল্লোল-মগ্নৌ মুহু-
র্বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৪॥
যাঁহারা অশেষ মণ্ডলাধিপত্যকে লোকোত্তর বৈরাগ্যের দ্বারা অতি তুচ্ছজ্ঞানে চিরতরে ত্যাগ করিয়া কৃপাপূর্ব্বক কৌপীণ-কন্থাশ্রিত হইয়া দীন-ভক্তগণের শিরোমণি-রূপে মধুরিমাযুক্ত গোপীভাবরূপ রসামৃত-সমুদ্রের আনন্দতরঙ্গ-কল্লোলে নিমগ্ন, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।
কূজৎ-কোকিল-হংস-সারস-গণাকীর্ণে ময়ূরাকুলে
নানারত্ন-নিবদ্ধ-মূল-বিটপ-শ্রীযুক্ত-বৃন্দাবনে
রাধাকৃষ্ণমহর্নিশং প্রভজতৌ জীবার্থদৌ যৌ মুদা
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৫॥
কলরব-রত কোকিল-হংস-সারসাদি-পক্ষিশ্রেণীদ্বারা পরিবৃত, ময়ূরের কেকারবে মুখর, বৃক্ষরাজিদ্বারা শোভিত, বহুরত্ন-নিবদ্ধ শ্রীবৃন্দাবনে যাঁহারা সর্ব্বদা দিবারাত্রি শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের ভজনে নিমগ্ন এবং জীবমাত্রের আনন্দপ্রদানকারী ভক্তিরূপ পরম পুরুষার্থ-প্রদাতা, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।
সঙ্খ্যাপূর্ব্বক-নাম-গান-নতিভিঃ কালাবসানীকৃতৌ
নিদ্রাহার-বিহারকাদি-বিজিতৌ চাত্যন্তদীনৌ চ যৌ
রাধাকৃষ্ণ-গুণ-স্মৃতের্মধুরিমানন্দেন সম্মোহিতৌ
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৬॥
যাঁহারা সতত সংখ্যাপূর্বক নাম-জপাদি, নাম-সঙ্কীর্ত্তন এবং প্রণামাদিদ্বারা কালযাপন-কারী, নিদ্রা-আহার-বিহারাদিতে জিতেন্দ্রিয় এবং অত্যন্ত দৈন্যবিশিষ্ট হইয়া শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের গুণ-স্মরণের মাধুর্য্যজনিত পরমানন্দে সর্ব্বদা বিভোর, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।
রাধাকুণ্ড-তটে কলিন্দ-তনয়া-তীরে চ বংশীবটে
প্রেমোন্মাদ-বশাদশেষ-দশয়া গ্রস্তৌ প্রমত্তৌ সদা
গায়ন্তৌ চ কদা হরের্গুণবরং ভাবাভিভূতৌ মুদা
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৭॥
যাঁহারা প্রেমোন্মাদ-বশতঃ বিরহ-জাত অশেষদশা-গ্রস্ত হইয়া প্রমত্তের ন্যায় কখনও রাধাকুণ্ড-তটে, কখনও কলিন্দ-কন্যা যমুনার তটে, কখনও বা বংশীবটে সর্ব্বদাই ভ্রমণকারী, শ্রীহরির উন্নত গুণগাথা হর্ষভরে গান করিতে করিতে ভাবে বিভোর সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে আমি বন্দনা করি।
হে রাধে! ব্রজদেবিকে! চ ললিতে! হে নন্দসূনো! কুতঃ
শ্রীগোবর্দ্ধন-কল্পপাদপ-তলে কালিন্দী-বন্যে কুতঃ
ঘোষন্তাবিতি সর্বতো ব্রজ-পুরে খেদৈর্মহাবিহ্বলৌ
বন্দে রূপ-সনাতনৌ রঘুযুগৌ শ্রীজীব-গোপালকৌ ॥৮॥
‘হে ব্রজদেবি! রাধিকে! হে ললিতে! হে নন্দনন্দন! তোমরা কোথায়?’—শ্রীগোবর্দ্ধনের কল্পবৃক্ষতলে, না কি যমুনার কূলস্থিত বনসমূহে, কোথায়?’—এই প্রকার আর্ত্তনাদ-সহকারে যাঁহারা বিরহ-পীড়ায় মহাবিহ্বল থাকেন, আমি সেই শ্রীশ্রীরূপ-সনাতন, শ্রীশ্রীরঘুনাথ-যুগল ও শ্রীশ্রীজীব-গোপালভট্ট-পাদগণকে বন্দনা করি।
শ্রীশ্রীনিত্যানন্দাষ্টকম্
শ্রীমদ্বৃন্দাবন-দাস-ঠক্কুর-বিরচিতম্
শরচ্চন্দ্র-ভ্রান্তিং স্ফুরদমল-কান্তিং গজগতিং
হরি-প্রেমোন্মত্তং ধৃত-পরম-সত্ত্বং স্মিতমুখম্ ।
সদা ঘূর্ণন্নেত্রং কর-কলিত-বেত্রং কলি-ভিদং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি ॥১॥
যাঁহার সুবিমল অঙ্গকান্তি শরৎকালীন চন্দ্র বলিয়া ভ্রম উৎপন্ন করে, যিনি মত্ত হস্তীর ন্যায় মৃদু-মন্থর গতিতে গমন করেন, যিনি সর্ব্বদা শ্রীকৃষ্ণপ্রেমে উন্মত্ত, যাঁহার শ্রীকলেবর বিশুদ্ধ-সত্ত্বময়, শ্রীমুখ মন্দমধুর হাস্যযুক্ত, নয়ন-যুগল সদাই চঞ্চল, যাঁহার হস্তে বেত্র শোভা পাইতেছে, যিনি কলির ধ্বংসকারী, শ্রীকৃষ্ণভক্তি-কল্পতরুর মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্ব্বদা ভজনা করি।
রসানামাগারং স্বজনগণ-সর্ব্বস্বমতুলং
তদীয়ৈক-প্রাণপ্রতিম-বসুধা-জাহ্নবা-পতিম্ ।
সদা প্রেমোন্ম্মাদং পরম-বিদিতং মন্দ-মনসাং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি ॥২॥
যিনি নিখিল রসের আধার, যিনি ভক্তগণের সর্ব্বস্ব, ত্রিজগতে কুত্রাপি যাঁহার তুলনা নাই, যিনি প্রাণপ্রতিম শ্রীবসুধা ও জাহ্নবা দেবীর প্রাণপতি, যিনি নিরন্তর প্রেমোন্মত্ত, মন্দমতিগণের নিকট দুর্ব্বিজ্ঞেয়, সেই শ্রীকৃষ্ণভক্তি-কল্পবৃক্ষের মূল-স্বরূপ শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্ব্বদা ভজনা করি।
শচীসূনু-প্রেষ্ঠং নিখিল-জগদিষ্টং সুখময়ং
কলৌমজ্জজ্জীবোদ্ধরণ-করণোদ্দাম-করুণম্ ।
হরেরাখ্যানাদ্বা ভব-জলধি-গর্বোন্নতি-হরং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি ॥৩॥
যিনি শ্রীগৌরাঙ্গের প্রিয়তম, সর্ব্বজগতের ইষ্টস্বরূপ, যিনি পরমসুখময়, কলিযুগে পাপহত জীবগণের দুস্তর সংসার-সুমুদ্রের গর্ব্ব খর্ব্ব করিয়াছেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তি-কল্পলতিকার মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি সর্ব্বদা ভজনা করি।
অয়ে ভ্রাতর্নৃণাং কলি-কলুষিণাং কিং নু ভবিতা
তথা প্রায়শ্চিত্তং রচয় যদনায়াসত ইমে ।
ব্রজন্তি ত্বামিত্থং সহ ভগবতা মন্ত্রয়তি যো
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি ॥৪॥
‘হে ভ্রাতঃ! কলি-পাপাচ্ছন্ন জীবগণের গতি কি হইবে? তুমি কৃপা করিয়া ঈদৃশ উপায় বিধান কর, যাহাতে তাহারা অনায়াসে তোমাকে লাভ করিতে পারে—এইরূপে যিনি ভগবান্ শ্রীগৌরসুন্দরের সহিত মন্ত্রণা করেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তি কল্পলতার মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ-প্রভুকে আমি ভজনা করি।
যথেষ্টং রে ভ্রাতঃ! কুরু হরি-হরি-ধ্বানমনিশং
ততো বঃ সংসারাম্বুধি-তরণ-দায়ো ময়ি লগেৎ ।
ইদং বাহু-স্ফোটৈরটতি রটয়ন্ যঃ প্রতিগৃহং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি ॥৫॥
‘হে ভাই সকল! তোমরা নিরন্তর শ্রীহরিনাম যথেষ্টরূপে কীর্ত্তন কর, তাহা হইলে তোমাদের ভব-সমুদ্র পার হইবার দায় আমাতেই রহিল’—এইরূপ বলিতে বলিতে যিনি বাহু আস্ফালনপূর্ব্বক গৃহে গৃহে ভ্রমণ করিতেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তি-কল্পতরুর মূল-স্বরূপ সেই নিত্যানন্দ-প্রভুকে আমি সর্ব্বদা ভজনা করি।
বলাৎ সংসারাম্ভোনিধি-হরণ-কুম্ভোদ্ভবমহো
সতাং শ্রেয়ঃ-সিন্ধূন্নতি-কুমুদ-বন্ধুং সমুদিতম্ ।
খলশ্রেণী-স্ফূর্জ্জত্তিমির-হর-সূর্য্য-প্রভমহং
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি ॥৬॥
অহো! কলস-জাত অগস্ত্য-ঋষির সমুদ্র-শোষণের ন্যায় যিনি জীবগণের সংসার-সমুদ্র শোষণ করেন, যিনি সজ্জনগণের কল্যাণ-সমুদ্র উদ্বেলিত করিবার জন্য পূর্ণরূপে উদিত চন্দ্র-স্বরূপ, যিনি দুর্জ্জনগণের পাপান্ধকার বিনাশ করিতে সূর্য্য-স্বরূপ, শ্রীকৃষ্ণভক্তি-কল্পলতার মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ-প্রভুকে আমি সর্ব্বদা ভজনা করি।
নটন্তং গায়ন্তং হরিমনুবদন্তং পথি পথি
ব্রজন্তং পশ্যন্তং স্বমপি নদয়ন্তং জনগণম্ ।
প্রকুর্ব্বন্তং সন্তং সকরুণ-দৃগন্তং প্রকলনাদ্
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি ॥৭॥
যিনি নৃত্য করিতে করিতে, কীর্ত্তন করিতে করিতে, হরিবোল বলিতে বলিতে ও শ্রীহরিনাম-কীর্ত্তনকারী নিজ ভক্তগণের প্রতি দৃষ্টি করিতে করিতে পথে পথে বিচরণ করেন এবং যিনি সজ্জনগণের প্রতি করুণ-নেত্রে দর্শন-বিস্তার করেন, শ্রীকৃষ্ণভক্তি-কল্পবৃক্ষের মূল-স্বরূপ সেই শ্রীনিত্যানন্দ-প্রভুকে আমি সর্ব্বদা ভজনা করি।
সুবিভ্রাণং ভ্রাতুঃ কর-সরসিজং কোমলতরং
মিথো বক্ত্রালোকোচ্ছলিত-পরমানন্দ-হৃদয়ম্ ।
ভ্রমন্তং মাধুর্য্যৈরহহ! মদয়ন্তং পুরজনান্
ভজে নিত্যানন্দং ভজন-তরু-কন্দং নিরবধি ॥৮॥
যিনি ভ্রাতা শ্রীগৌরাঙ্গের সুকোমল হস্ত-কমল ধারণ করিয়া পরস্পরের মুখচন্দ্র দর্শন-জনিত পরমানন্দে পূর্ণহৃদয় হন এবং আহা মরি! নগর-বাসিগণকে স্বীয় অনির্ব্বচনীয় মাধুর্য্যে উন্মত্ত করিয়া চতুর্দ্দিকে বিচরণ করেন, সেই শ্রীকৃষ্ণভক্তি-কল্পলতার মূল-স্বরূপ শ্রীনিত্যানন্দ-প্রভুকে আমি সর্ব্বদা ভজনা করি।
রসানামাধানং রসিক-বর-সদ্বৈষ্ণবধনং
রসাগারং সারং পতিত-ততি-তারং স্মরণতঃ ।
পরং নিত্যানন্দাষ্টকমিদমপূর্ব্বং পঠতি য-
স্তদঙ্ঘ্রি-দ্বন্দ্বাব্জং স্ফুরতু নিতরাং তস্য হৃদয়ে ॥৯॥
যিনি সমূহ ভক্তিরসের প্রদাতা, যিনি রসিক ভক্তগণের সর্ব্বস্ব-ধন, যিনি নিখিল রসের আধার-ভূত, যিনি ত্রিজগতের সারবস্তু, যাঁহার স্মরণে পাপিগণেরও পরিত্রাণ লাভ হইয়া থাকে, সেই শ্রীনিত্যানন্দপ্রভুর এই অত্যুত্তম ও অপূর্ব্ব অষ্টক যিনি পাঠ করেন, তাঁহার হৃদয়ে তদীয় সুদুর্ল্লভ শ্রীপাদপদ্ম নিরন্তর স্ফূর্তি প্রাপ্ত হউক।
শ্রীশচীতনয়াষ্টকম্
[শ্রীল-সার্বভৌম-ভট্টাচার্য বিরচিতম্]
উজ্জ্বল-বরণ-গৌরবর-দেহং
বিলসিত-নিরবধি-ভাববিদেহম্ ।
ত্রিভুবন-পাবন-কৃপায়া লেশং
তং প্রণমামি চ শ্রীশচীতনয়ম্ ॥১॥
গদ্গদ-অন্তর-ভাববিকারং
দুর্জ্জন-তর্জ্জন-নাদ-বিশালম্ ।
ভবভয়ভঞ্জন-কারণ-করুণং
তং প্রণমামি চ শ্রীশচীতনয়ম্ ॥২॥
অরুণাম্বরধর-চারুকপোলং
ইন্দু-বিনিন্দিত-নখচয়-রুচিরম্ ।
জল্পিত-নিজগুণনাম-বিনোদং
তং প্রণমামি চ শ্রীশচীতনয়ম্ ॥৩॥
বিগলিত-নয়ন-কমল-জলধারং
ভূষণ-নবরস-ভাববিকারম্ ।
গতি-অতিমন্থর-নৃত্যবিলাসং
তং প্রণমামি চ শ্রীশচীতনয়ম্ ॥৪॥
চঞ্চল-চারু-চরণ-গতি-রুচিরং
মঞ্জীর-রঞ্জিত-পদযুগ-মধুরম্ ।
চন্দ্র-বিনিন্দিত-শীতলবদনং
তং প্রণমামি চ শ্রীশচীতনয়ম্ ॥৫॥
ধৃত-কটি-ডোর-কমণ্ডলু-দণ্ডং
দিব্য-কলেবর-মুণ্ডিত-মুণ্ডম্ ।
দুর্জ্জন-কল্মষ-খণ্ডন-দণ্ডং
তং প্রণমামি চ শ্রীশচীতনয়ম্ ॥৬॥
ভূষণ-ভূরজ-অলকা-বলিতং
কম্পিত-বিম্বাধরবর-রুচিরম্ ।
মলয়জ-বিরচিত-উজ্জ্বল-তিলকং
তং প্রণমামি চ শ্রীশচীতনয়ম্ ॥৭॥
নিন্দিত-অরুণ-কমল-দল-নয়নং
আজানুলম্বিত-শ্রীভুজ-যুগলম্ ।
কলেবর-কৈশোর-নর্ত্তক-বেশং
তং প্রণমামি চ শ্রীশচীতনয়ম্ ॥৮॥
শ্রীশ্রীকৃষ্ণচন্দ্রাষ্টকম্
[শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ-গোস্বামি-বিরচিতম্ ]
অম্বুদাঞ্জনেন্দ্রনীল-নিন্দি-কান্তি-ডম্বরঃ
কুঙ্কুমোদ্যদর্ক-বিদ্যুদংশু-দিব্যদম্বরঃ ।
শ্রীমদঙ্গ-চর্চ্চিতেন্দু পীতনাক্ত-চন্দনঃ
স্বাঙ্ঘ্রিদাস্যদোঽস্তু মে স বল্লবেন্দ্র-নন্দনঃ ॥১॥
যাঁহার কান্তিচ্ছটা নব-জলধর, দলিত কজ্জ্বল ও ইন্দ্রনীলমণিকেও তিরস্কার করে, যাঁহার বসন কুঙ্কুম, উদয়মান সূর্য্য ও বিদ্যুৎ হইতেও দীপ্তিমান্, যাঁহার শ্রীঅঙ্গ কর্পূর ও কুঙ্কুমযুক্ত চন্দনে চর্চিত, সেই গোপেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ আমাকে নিজ পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
গণ্ড-তাণ্ডবাতি-পণ্ডিতাণ্ডজেশ-কুণ্ডল-
শ্চন্দ্র-পদ্মষণ্ড-গৰ্ব্ব-খণ্ডনাস্য-মণ্ডলঃ ।
বল্লবীষু বৰ্দ্ধিতাত্ম-গূঢ়ভাব-বন্ধনঃ
স্বাঙ্ঘ্রিদাস্যদোঽস্তু মে স বল্লবেন্দ্র-নন্দনঃ ॥২॥
যাঁহার গণ্ডদ্বয়ে মকর-কুণ্ডল নিত্যনব্য-রূপ-বেশ-হাদ-কেলি-চেষ্টিতঃ কেলিনৰ্ম্ম-শৰ্ম্মদায়ি-মিত্রবৃন্দ-বেষ্টিতঃ। স্বীয় কেলি-কাননাংশু-নির্জ্জিতেন্দ্র-নন্দনঃ পরম নিপুণতার সহিত নৃত্য করিতেছে, যাঁহার শ্রীমুখমণ্ডল চন্দ্র ও পদ্মসমূহের গর্ব্ব খর্ব্ব করিতেছে এবং যিনি গোপাঙ্গনাসমূহে স্বীয় নিগূঢ় ভাব অর্থাৎ প্রেম বৰ্দ্ধিত করিতেছেন, সেই গোপেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ আমাকে নিজ পাদপদ্মের দাস্য দান করুন ।
নিত্যনব্য-রূপ-বেশ-হার্দ্দ-কেলি-চেষ্টিতঃ
কেলিনৰ্ম্ম-শৰ্ম্মদায়ি-মিত্রবৃন্দ-বেষ্টিতঃ ।
স্বীয়-কেলি-কাননাংশু-নির্জ্জিতেন্দ্র-নন্দনঃ
স্বাঙ্ঘ্রিদাস্যদোঽস্তু মে স বল্লবেন্দ্র-নন্দনঃ ॥৩॥
৩) যিনি নিত্যনূতন রূপ, বেশ, ও প্রেমময় লীলা-বিষয়ে সদা উদ্যোগী, যিনি নৰ্ম্মকেলি-পরায়ণ সুখদায়ক সখাগণ-দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং যাঁহার কেলি-কাননের প্রভা ইন্দ্রের নন্দন-কাননকেও পরাভব করে, সেই গোপেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ আমাকে নিজ পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
প্রেমহেম-মণ্ডিতাত্ম-বন্ধুতাভিনন্দিতঃ
ক্ষৌণীলগ্ন-ভাল-লোকপাল-পালি-বন্দিতঃ ।
নিত্যকালসৃষ্ট-বিপ্র-গৌরবালি-বন্দনঃ
স্বাঙ্ঘ্রিদাস্যদোঽস্তু মে স বল্লবেন্দ্র-নন্দনঃ ॥৪॥
৪) প্রেম-রূপ স্বর্ণভূষণে মণ্ডিত প্রাণবন্ধুগণের দ্বারা যিনি অভিনন্দিত হন, ইন্দ্রাদি লোকপালগণ মস্তক-দ্বারা ভূমি-স্পর্শ করিয়া যাঁহাকে বন্দনা করেন এবং যিনি নিত্যকাল বিপ্রগণ ও গুরুবর্গকে প্রণাম করিয়া থাকেন, সেই গোপেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ আমাকে নিজ পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
লীলয়েন্দ্র-কালিয়োষ্ণ-কংস-বৎস-ঘাতক-
স্তত্তদাত্ম-কেলি-বৃষ্টি-পুষ্ট-ভক্তচাতকঃ ।
বীৰ্য্যশীল-লীলয়াত্ম-ঘোষবাসি-নন্দনঃ
স্বাঙ্ঘ্রিদাস্যদোঽস্তু মে স বল্লবেন্দ্র-নন্দনঃ ॥৫॥
৫) যিনি লীলাবশে ইন্দ্র ও কালিয়নাগের উষ্ণ অর্থাৎ কোপ দূর করিয়াছেন তথা কংস ও বৎসাসুরকে ধ্বংস করিয়াছেন, যিনি নিজ সেই সেই লীলাধারার বর্ষণদ্বারা ভক্তরূপ চাতকগণকে পোষণ করেন এবং যিনি তাঁহার সেই পরাক্রমযুক্ত লীলা-দ্বারা আভীর- পল্লী-বাসী গোপগণকে আনন্দিত করিয়াছেন, সেই গোপেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ আমাকে নিজ পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
কুঞ্জ-রাসকেলি-সীধু-রাধিকাদি-তোষণ-
স্তত্তদাত্ম-কেলি-নৰ্ম্ম-তত্তদালি-পোষণঃ ।
প্রেম-শীল-কেলি-কীৰ্ত্তি-বিশ্বচিত্ত-চন্দনঃ
স্বাঙ্ঘ্রিদাস্যদোঽস্তু মে স বল্লবেন্দ্র-নন্দনঃ ॥৬॥
৬) যিনি কুঞ্জমধ্যে রাসক্রীড়া-রূপ অমৃত- সিঞ্চন-দ্বারা শ্রীরাধিকাদি সখীগণকে তুষ্ট করেন ও যিনি নিজ সেই সেই লীলা-জনিত হাস্য-পরিহাসাদি দ্বারা সেইসকল সখীগণকে পোষণ করেন এবং যাঁহার প্রেম, চরিত্র ও লীলা-সমূহের কীর্ত্তিরাশি নিখিল জগজ্জনের মানস আলোকিত করিতেছে, সেই গোপেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ আমাকে নিজ পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
রাসকেলি-দর্শিতাত্ম-শুদ্ধভক্তি-সৎপথঃ
স্বীয়-চিত্র-রূপবেশ-মন্মথালি-মন্মথঃ ।
গোপিকাসু নেত্রকোণ-ভাববৃন্দ-গন্ধনঃ
স্বাঙ্ঘ্রিদাস্যদোঽস্তু মে স বল্লবেন্দ্র-নন্দনঃ ॥৭॥
৭) যিনি রাসলীলা-সমূহদ্বারা ভক্তগণকে নিজ শুদ্ধভক্তিময় সৎপথ প্রদর্শন করেন, যাঁহার মনোহর রূপ ও বেশদ্বারা মন্মথেরও মন মথিত হয় এবং যিনি নিজ নয়ন-কোণের বঙ্কিম দৃষ্টিদ্বারা গোপিকাগণের হৃদয়ে বিবিধ ভাব-তরঙ্গ উৎপন্ন করেন, সেই গোপেন্দ্র-নন্দন শ্ৰীকৃষ্ণ আমাকে নিজ পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
পুষ্পচায়ি-রাধিকাভিমর্ষ-লব্ধি-তৰ্ষিতঃ
প্রেমবাম্য-রম্য-রাধিকাস্য-দৃষ্টি-হর্ষিতঃ ।
রাধিকোরসীহ লেপ এষ হরিচন্দনঃ
স্বাঙ্ঘ্রিদাস্যদোঽস্তু মে স বল্লবেন্দ্র-নন্দনঃ ॥৮॥
৮) পুষ্পচয়ন-রতা শ্রীরাধিকার অঙ্গ-স্পর্শের জন্য যিনি ব্যাকুল হন, শ্রীরাধিকার প্রেম-জনিত বাম্যভাব-বশতঃ রমণীয় মুখচন্দ্ৰ দর্শন করিয়া যিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং যিনি শ্রীরাধিকার বক্ষঃস্থলে ধৃত [ পরম সুগন্ধি ও পরম সুখজনক] চন্দনলেপ-স্বরূপ, সেই গোপেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ আমাকে নিজ পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
অষ্টকেন যস্ত্বনেন রাধিকাসুবল্লভং
সংস্তবীতি দর্শনেঽপি সিন্ধুজাদি-দুৰ্ল্লভম্ ।
তং যুনক্তি তুষ্টচিত্ত এষ ঘোষ-কাননে
রাধিকাঙ্গ-সঙ্গ-নন্দিতাত্ম-পাদ-সেবনে ॥৯॥
৯) যে ব্যক্তি এই অষ্টকদ্বারা শ্রীরাধিকার প্রাণবল্লভকে স্তব করেন, লক্ষ্মী প্রভৃতির পক্ষে যাঁহার দর্শনও দুৰ্ল্লভ, সেই শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র তাঁহার প্রতি তুষ্ট হইয়া এই শ্রীবৃন্দাবনে শ্রীরাধিকার সঙ্গে আনন্দিত নিজ পাদপদ্মের সেবায় তাঁহাকে নিযুক্ত করেন ।
শ্রীশ্রীরাধিকাষ্টকম্ (৩)
[শ্রীল-কৃষ্ণদাস-কবিরাজ-গোস্বামী-বিরচিতম্]
কুঙ্কুমাক্ত-কাঞ্চনাব্জ-গর্ব্বহারি-গৌরভা
পীতনাঞ্চিতাব্জ-গন্ধকীর্ত্তি-নিন্দি-সৌরভা ।
বল্লবেশ-সূনু-সর্ব্ব-বাঞ্ছিতার্থ-সাধিকা
মহ্যমাত্ম্য-পাদপদ্ম-দাস্যদাস্তু রাধিকা ॥১॥
যাঁহার অঙ্গের গৌরকান্তি কুঙ্কুমলিপ্ত স্বর্ণ-কমলের গর্ব্ব হরণ করে, যাঁহার অঙ্গের সুসৌরভে হরিচন্দন-যুক্ত পদ্মের গন্ধ-জনিত কীর্ত্তি তিরস্কৃত হয় এবং যিনি গোপেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণের বাঞ্ছিত সমস্ত প্রয়োজন সাধন করিয়া থাকেন, সেই শ্রীরাধিকা আমাকে নিজ-পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
কৌরবিন্দ-কান্তি-নিন্দি-চিত্র-পট্ট-শাটিকা
কৃষ্ণ-মত্তভৃঙ্গ-কেলি-ফুল্ল-পুষ্প-বাটিকা ।
কৃষ্ণ-নিত্য-সঙ্গমার্থ-পদ্মবন্ধু-রাধিকা
মহ্যমাত্ম্য-পাদপদ্ম-দাস্যদাস্তু রাধিকা ॥২॥
যাঁহার চিত্রযুক্তা পট্টশাটী (পাটের শাড়ী) প্রবালের কান্তিকেও নিন্দা করিতেছে, যিনি কৃষ্ণ-রূপ মত্ত ভ্রমরের বিলাসের জন্য প্রফুল্লিতা পুষ্প-উদ্যান-স্বরূপা এবং যিনি কৃষ্ণ-সঙ্গ লাভ করিবার জন্য নিত্য সূর্য্যদেবের আরাধনা করেন, সেই শ্রীরাধিকা আমাকে নিজ-পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
সৌকুমার্য্য-সৃষ্ট-পল্লবালি-কীর্তি-নিগ্রহা
চন্দ্র-চন্দনোৎপলেন্দু-সেব্য-শীত-বিগ্রহা ।
স্বাভিমর্ষ-বল্লবীশ-কাম-তাপ-বাধিকা
মহ্যমাত্ম্য-পাদপদ্ম-দাস্যদাস্তু রাধিকা ॥৩॥
যাঁহার সুকুমারিতা (অঙ্গের সুকোমলত্ব) পল্লব-শেণীর কীর্ত্তি বিলোপ করিয়া থাকে, যাঁহার সুশীতল অঙ্গ-চন্দ্র, চন্দন, কমল ও কর্পূরাদি দ্বারা আরাধিত হয় এবং যিনি নিজাঙ্গ-স্পর্শ সুধাদ্বারা গোপীবল্লভ শ্রীকৃষ্ণের কাম-তাপ দূরীভূত করেন, সেই শ্রীরাধিকা আমাকে নিজ-পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
বিশ্ববন্দ্য-যৌবতাভিবন্দিতাপি যা রমা
রূপ-নব্য-য়ৌবনাদি-সম্পদা ন যৎসমা ।
শীল-হার্দ্দ-লীলয়া চ সা যতোঽস্তি নাধিকা
মহ্যমাত্ম্য-পাদপদ্ম-দাস্যদাস্তু রাধিকা ॥৪॥
বিশ্ব-বন্দনীয়া যুবতীগণের দ্বারা বন্দিতা লক্ষ্মীদেবী-রূপ-নবযৌবনাদি সম্পৎ, শীল (স্বভাব) ও প্রেমলীলার পরিমাণে যাঁহার সমান নহেন এবং যাঁহা অপেক্ষা অধিকাও নহেন, সেই শ্রীরাধিকা আমাকে নিজ-পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
রাস-লাস্য-গীত-নর্ম্ম-সৎকলালি-পণ্ডিতা
প্রেম-রম্য-রূপ-বেশ-সদ্গুণালি-মণ্ডিতা ।
বিশ্ব-নব্য-গোপ-যোষিদালিতোঽপি যাধিকা
মহ্যমাত্ম্য-পাদপদ্ম-দাস্যদাস্তু রাধিকা ॥৫॥
যিনি রাসক্রীড়ায় নৃত্য, গীত ও পরিহাসাদি অত্যুৎকৃষ্ট রসকলা-সমূহে পরম বিদুষী, যিনি প্রেম-মণ্ডিত মনোহর রূপ, বেশ এবং বিবিধ সদ্গুণাবলী-দ্বারা বিভূষিতা, তথা যিনি বিশ্ববন্দিতা নবীন যৌবন-সম্পন্না গোপ-ললনাগণের মধ্যে সর্ব্বশ্রেষ্ঠা, সেই শ্রীরাধিকা আমাকে নিজ-পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
নিত্য-নব-রূপ-কেলি-কৃষ্ণভাব-সম্পদা
কৃষ্ণ-রাগ-বন্ধ-গোপ-যৌবতেষু কম্পদা ।
কৃষ্ণ-রূপ-বেশ-কেলি-লগ্ন-সৎসমাধিকা
মহ্যমাত্ম্য-পাদপদ্ম-দাস্যদাস্তু রাধিকা ॥৬॥
যিনি নিত্য নব নব রূপ, কেলি ও কৃষ্ণভাব-এই সমস্ত সম্পত্তিদ্বারা শ্রীকৃষ্ণে বদ্ধানুরাগা গোপরমণীগণ-মধ্যে কম্প (স্বপক্ষীয়াগণ মধ্যে হর্ষজনিত কম্প ও বিপক্ষীয়াগণ মধ্যে কাতরতা-জনিত কম্প) উৎপাদন করেন এবং যাঁহার চিত্ত কৃষ্ণের রূপ, বেশ ও কেলি-বিষয়ে সর্ব্বদা সমাধিগ্রস্ত (একাগ্রভাবে সংলগ্না) হইয়া থাকে, সেই শ্রীরাধিকা আমাকে নিজ-পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
স্বেদ-কম্প-কণ্টকাশ্রু-গদ্গদাদি-সঞ্চিতা-
মর্ষ-হর্ষ-বামতাদি-ভাব-ভূষণাঞ্চিতা ।
কৃষ্ণ-নেত্র-তোষি-রত্ন-মণ্ডনালি-দাধিকা
মহ্যমাত্ম্য-পাদপদ্ম-দাস্যদাস্তু রাধিকা ॥৭॥
যিনি স্বেদ, কম্প, পুলক, অশ্রু ও গদ্গদাদি সাত্ত্বিক বিকার-সমূহে পরিশোভিতা, যিনি ক্রোধ, হর্ষ, বামতাদি ভাব-ভূষণে বিভূষিতা এবং যিনি শ্রীকৃষ্ণ-নয়নের অনন্দকর রত্ন-ভূষণসমূহে সুসজ্জিতা, সেই শ্রীরাধিকা আমাকে নিজ-পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
যা ক্ষণার্দ্ধ-কৃষ্ণ-বিপ্রয়োগ-সন্ততোদিতা-
নেক-দৈন্য-চাপলাদি-ভাববৃন্দ-মোদিতা ।
যত্নলব্ধ-কৃষ্ণসঙ্গ-নির্গতাখিলাধিকা
মহ্যমাত্ম্য-পাদপদ্ম-দাস্যদাস্তু রাধিকা ॥৮॥
যিনি ক্ষণার্দ্ধকালও শ্রীকৃষ্ণ-বিরহে তজ্জনিত নিরন্তর অনেক দৈন্য, চাপল্যাদি ভাব-সমূহের দ্বারা ব্যথিতা হইয়া পড়েন এবং [স্বকৃত বা কৃষ্ণকৃত দূতী-প্রেরণাদি] চেষ্টাদ্বারা লব্ধ শ্রীকৃষ্ণ-সঙ্গে কেবল যাঁহার সকল মনঃকষ্ট দূরীভূত হয়, সেই শ্রীরাধিকা আমাকে নিজ-পাদপদ্মের দাস্য দান করুন।
অষ্টকেন যস্ত্বস্নেন নৌতি কৃষ্ণবল্লভাং
দর্শনেঽপি শৈলজাদি-যোষিদালি-দুর্ল্লভাম্ ।
কৃষ্ণসঙ্গ-নন্দিতাত্ম-দাস্য-সীধু-ভাজনং
তং করোতি নন্দিতালি-সঞ্চয়াশু সা জনম্ ॥৯॥
যাঁহার দর্শন পার্ব্বতী প্রভৃতি দেবীগণের পক্ষেও দুর্ল্লভ, সেই কৃষ্ণপ্রেসী শ্রীরাধিকাকে যে ব্যক্তি এই অষ্টকদ্বারা স্তব করেন, শ্রীরাধিকা প্রফুল্লিতা সখীগণ সমভিব্যাহারে শ্রীকৃষ্ণ-সঙ্গে আনন্দিতা হইয়া সেই ব্যক্তিকে শীঘ্র আপনার দাস্যামৃত প্রদান করেন।